জোড়ার বাত ও প্রতিকার

ওসটিও আর্থরাইটিস বা গিঁটে বাত শরীরের যে কোন জোড়ায় হতে পারে।

তবে ওজন বহনকারী বড় জোড়ায় বেশি হয়। হাত ও পায়ের আঙ্গুলের জোড়া, মেরম্নদন্ডের জোড়া এবং হাঁটু ও কটির জোড়ায় বেশি হয়। ওসটিও আর্থ্রাইটিস এমন একটি রোগ যেখানে জোড়ার তরম্নণাস্থি ও হাড়ের ক্ষয় হয় বেশি কিন্তু প্রদাহ হয় কিঞ্চিত। একে স্বাভাবিক বাংলায় গিঁটে বাত বলে। ওসটিও আর্থ্রাইটিস শুধু তরম্নণাস্থি ও হাড়ের ৰয় করে না এটি জোড়ার লাইনিং (সাইনোভিয়াম), জোড়ার কভার (ক্যাপসুল) ও জোড়ার পেশীকে আক্রানত্ম করে। গিঁটে বাত হলে জোড়া মসৃণ ও লুব্রিকেন্ট থাকে না এবং তরম্নণাস্থি ও তরম্নণাস্থির নিচের হাড় ৰয় হতে থাকে। জোড়ার পেশীর খিঁচুনি হয় ও পেশী শুকিয়ে যায়। ফলে জোড়া আনস্ট্যাবল হয়। মধ্যবয়সী ও বয়স্কদের ওসটিও আর্থ্রাইটিস বা গিঁটে বাত হয়। ৬৫ বছরের উর্ধে এক-তৃতীয়াংশ লোক এবং ৭০ বছরের উর্ধে ৭০ শতাংশ লোক ওসটিও আর্থ্রাইটিস বা গিঁটে বাতে ভোগে। ৫০ বছরের পূর্বে মহিলাদের তুলনায় পুরম্নষরা এবং ৫০ বছরের পরে পুরম্নষদের তুলনায় মহিলারা গিঁটে বাত বা ওসটিও আর্থ্রাইটিসে বেশি ভোগে।


কারণসমূহ:

  • জেনেটিক (বংশগত)। 
  • ওবেসিটি (অতিরিক্ত ওজন)। 
  • গরন্থি সমস্যা_ ডায়াবেটিস, এক্রোমেগালি এবং হাইপো ও হাইপারথাইরোডিজম। 
  • আথর্্রাইটিস সেপটিক, রিউমাটয়েড ও গাউটি আর্থ্রাইটিস। 
  • মেটাবোলিক (বিপাকীয়) পেজেটস ও উইলসন ডিজিজ। 
  • জন্মগত বা অস্বাভাবিক হাড়ের বৃদ্ধি। 
  • স্নায়ু রোগ।
আঘাতের কারণে জোড়া ডিসপেস্নসমেন্ট, হাড় ফ্যাঙ্গার, লিগামেন্ট ও তরম্নণাস্থি ইনজুরি হলে অল্প বয়সে গিঁটে বাত শুরু হয়।
 

লক্ষনসমূহঃ
  • কটির জোড়া 
  • কটির জোড়ায় ওসটিও আর্থ্রাইটিস বা গিঁটে বাত হলে কুঁচকি, নিতম্ব, উরম্নর ভেতর পাশে এবং এমনকি হাঁটুতে ব্যথা হয়। 
  • জোড়া জমে যাওয়ার জন্য পায়ে মোজা পরতে অসুবিধা হয়। 
  • বিভিন্ন মুভমেন্ট সীমিত হয়। 
  • খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়। 
  • রাতে এবং বিশ্রামে ব্যথা হলে বুঝতে হবে রোগ গুরম্নতর।

ঘাড় ও কোমর:
মেরদন্ডের মধ্যে ঘাড়ের নিচের দিকের এবং কোমরের হাড়ে (কশেরম্নকা) ওসটিও আথর্্রাইটিস হয়।
ঘাড়, বাহু, হাত, কোমর ও পায়ে ব্যথা হয় এবং দুর্বলতা ও অবশ ভাব হতে পারে।
হাঁটু
ফোলা ও ব্যথার জন্য হাঁটুর মুভমেন্ট করা যায় না।
মুভমেন্টের সময় ক্র্যাকিং (ক্রিপিটাস) শব্দ শুনতে বা বুঝতে পারা যাবে।
রোগী বেশিক্ষণ বসলে হাঁটু সোজা করতে কষ্ট হয়।
অনেক সময় হাঁটু আটকে যায়, রোগী হাঁটুকে বিভিন্ন মুভমেন্ট করিয়ে সোজা করে।
হাঁটুর পেশী শুকিয়ে যায় এবং হাঁটুতে শক্তি কমে যায়।
উঁচু-নিচু জায়গায় হাঁটা যায় না, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে এবং বসলে উঠতে কষ্ট হয়।
হাঁটু ইনসিকিউর বা আনস্ট্যাবল মনে হবে_ দাঁড়াতে বা হাঁটতে চেষ্টা করলে মনে হবে হাঁটু ছুটে যাচ্ছে বা বেঁকে যাচ্ছে।
আঙ্গুল
হাড়ের আঙ্গুলের শেষের (ডিসটাল) জোড়ায় ব্যথা হয়।
জোড়া জমে যায়।
নতুন হাড় (হেবেরডেন নোডস) হয়ে জোড়া ফুলে যায়।
ল্যাবরেটরি পরীক্ষা
রক্তের বিভিন্ন
পরীক্ষা
এঙ্-রে : জয়েন্ট স্পেস কম, তরম্নণাস্থির নিচে হাড়ের মধ্যে সিস্ট ও ওসটিওফাইট (নতুন হাড়)।
এমআরআই।


চিকিৎসা বা প্রতিকারঃ
চিকিৎসার শুরম্নতেই ওসটিও আর্থ্রাইটিস বা গিঁটে বাতের কারণ এবং রোগের তীব্রতা নির্ণয় করা একানত্ম প্রয়োজন। এ রোগ একবার শুরম্ন হলে প্রকৃতির নিয়মে বাড়তে থাকে। তবে দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা পরিবর্তন ও সুষ্ঠু কিছু নিয়মের মাধ্যমে ওসটিও আর্থ্রাইটিসের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ এবং উপসর্গ লাঘব করা যায়।
কনজারভেটিভ বা মেডিক্যাল ব্যবস্থা
ওবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। ফল, শাকসবজি, কম ক্যালোরি, কম সুগার ও কম চর্বিযুক্ত খাবার, শিম, মটরশুঁটি, চর্বিবিহীন মাংস, বাদাম ও অখ্যাত খাদ্যশস্য ইত্যাদি খেতে হবে।



স্ট্রেরিং ও পেশী শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম জোড়ার মুভমেন্ট বজায় রাখে এবং জোড়া জমে যাওয়া লাঘব করে। ভুল ব্যায়াম জোড়ার ৰতি করে এবং রোগকে অতিরঞ্জিত করে। জোড়ার চারপাশের পেশী ও টিসু্য সংকুচিত হলে স্বাভাবিক মুভমেন্ট পুনরম্নদ্ধার করা বড়ই কঠিন।
ওয়াকিং স্টিক, উঁচু চেয়ার, হাঁটু সাপোর্ট ও কুশনযুক্ত জুতা ব্যবহার করলে কোমর, কটি ও হাঁটুর ব্যথা কম হবে।
গরম ও ঠান্ডা সেঁক ব্যবহারে পেশীর সংকোচন কমবে, রক্ত চলাচল বাড়বে এবং ব্যথা কমবে।
বেদনানাশক ওষুধ সেবন।



কনড্রিওটিন সালফট/ক্লোরাইড সেবনে তরম্নণাস্থি ৰয় নিবারণ হবে।
ভিটামিন সি, ই ও ডি এবং ক্যালসিয়াম নিয়মিত সেবনে রোগের তীব্রতা কমে আসবে।
ফিজিক্যাল থেরাপি এসডবিস্নউডি, ইউএসটি ও টিইএনএস ব্যবহারে পেশীর সংকোচন, জমে যাওয়া ও ব্যথা উপশম হবে।
ইনকেজশন স্টেরয়েড ও হায়ালুরোনিক এ্যাসিড জয়েন্টে পুশ করলে রোগের উপসর্গ সাময়িক উপশম হবে। ইনজেকশন এক বছরে তিন বা চারের অধিকবার দেয়া নিষেধ।


সার্জিক্যাল পদ্ধতি : কনজারভেটিভ চিকিৎসায় ভাল না হলে সার্জিক্যাল চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে_
আর্থ্রোস্কোপিক জয়েন্ট ল্যাভেজ।
আর্থ্রোস্কোপিক ডেব্রাইডমেন্ট।
রোটেশনাল ওসটিওটোমি।
জয়েন্ট রিপেস্নসমেন্ট।
আথ্রর্োস্কোপিক বা জয়েন্ট রিপেস্নসমেন্ট চিকিৎসায় রোগের উপসর্গ দ্রম্নত উপশম হবে।

ডা. জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন, 

ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতাল, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা।

Comments

Popular posts from this blog

কালোজিরার গুণ

ব্রন থেকে মুক্তি পাওয়ার ১০০% পরীক্ষিত উপায়